এই কারণেই যারা ২৪:১৪ দর্শনে অঙ্গীকার করেছেন তাদের মূল লক্ষ্য হল রাজ্যের আন্দোলনে নিযুক্তিকরণ । আমরা উপলব্ধি করেছি যে কেবলমাত্র একটি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত শিষ্য, মণ্ডলী এবং নেতাদের আন্দোলনই সমগ্র সম্প্রদায়, ভাষাগোষ্ঠী, শহর এবং জাতিকে শিষ্য করতে পারে ।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে মিশনের বিষয়ে আমরা কেবলমাত্র জিজ্ঞাসা করেছিঃ “আমি কি করতে পারি ?” কিন্তু আমাদের জিজ্ঞাসা করতে হবেঃ মহান আদেশ পরিপূর্ণ করার ক্ষেত্রে আমাদের দায়িত্ব পালন করার জন্য আমাদের “কি করা উচিত ?”
আমরা শুধু বলতে পারি না, “আমি যাব এবং কিছু মানুষের আত্মা জয় করার প্রচেষ্টা করবো এবং মণ্ডলী স্থাপন করতে শুরু করবো ।” আমাদের জিজ্ঞাসা করতে হবেঃ “কি করলে কোন একটি নির্দিষ্ট এথনোস্ (জাতিকে) অথবা বিভিন্ন এথনে গুলিকে শিষ্য করা যায় ?”
প্রতিকূলতামূলক একাধিক দেশের একটি অঞ্চলে, একটি মিশন দল বিভিন্ন স্থানে সেবা করতে শুরু করে এবং তারা দেখতে পায় যে তিন বছরের মধ্যে ২২০টি মণ্ডলী স্থাপিত হয়েছে । এটি অত্যন্ত উত্তম ফলাফল, বিশেষতঃ তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কঠিন এবং প্রতিকূলতামূলক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে । কিন্তু এই দলের একটি দর্শন ছিল, যেন তারা নিজেদের সমস্ত অঞ্চলকে শিষ্য হতে দেখতে পারে ।
তাদের প্রশ্ন ছিলঃ “আমাদের প্রজন্মের এই অঞ্চলের সমস্ত লোকদের শিষ্য করার জন্য আমাদের কি মুল্য প্রদান করতে হবে ?” উত্তর ছিল যে একটি দৃঢ় সূচনার (একটি আরম্ভ – সমাপ্তি নয়) জন্য প্রায় ১০,০০০ মণ্ডলী স্থাপন করা প্রয়োজন । সেকারণে, তিন বছরে ২২০টি মণ্ডলী স্থাপন করা যথেষ্ট নয়!
ঈশ্বর তাদের দেখিয়েছেন যে তাদের অঞ্চলের সর্বত্র পৌঁছানোর জন্য তাদের এমন মণ্ডলী স্থাপন করতে হবে যারা দ্রুত গতিতে নিজেদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে । তারা সমস্তকিছু পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত ছিল । যখন ঈশ্বর সেখানে সিপিএম প্রশিক্ষকদের প্রেরণ করেছিলেন, তারা ঈশ্বরের বাক্য থেকে যাচাই করেন ও প্রার্থনা করেন এবং কিছু মৌলিক পরিবর্তন করেন । ফলস্বরূপ আজ পর্যন্ত, ঈশ্বর সেই অঞ্চলে ৭,০০০টির ও এর বেশি মণ্ডলী স্থাপন করেছেন ।
একজন এশিয়া নিবাসী পালক ১৪ বছরে ১২টি মণ্ডলী স্থাপন করেছিলেন । এটি উত্তম ফলাফল ছিল, কিন্তু এটি সেই অঞ্চলের হারিয়ে যাওয়া মানুষের অবস্থার পরিবর্তন করতে পারছিল না । ঈশ্বর তাকে এবং তার সহকর্মীদের দর্শন দিলেন যে সমগ্র উত্তর ভারতের কাছে ঈশ্বরের বাক্য পৌঁছানোর কাজে তারাও অংশীদার হবে । তারা প্রথাগত পদ্ধতিগুলি নিজেদের মধ্যে থেকে অপসারণ করার কঠিন প্রচেষ্টা করতে এবং আরো বেশী করে বাইবেল-ভিত্তিক কৌশলগুলি শিখতে শুরু করলেন । আজকে প্রায় ৩৬,০০০ মণ্ডলী সেখানে স্থাপিত হয়েছে । এবং এটি কেবলমাত্র সেই কাজের সূচনা যার জন্য ঈশ্বর তাদের আহ্বান করেছেন ।
পৃথিবীর আরেকটি সুসমাচার অপ্রাপ্ত স্থানে ঈশ্বর ব্যাপকভাবে আন্দোলনের কাজ শুরু করেছেন যেখানে একটি ভাষাগোষ্ঠী থেকে সাতটি ভিন্ন ভাষাগোষ্ঠী এবং পাঁচটি বড় শহরে আন্দোলনের কাজ প্রসারিত হয়েছে । তারা প্রায় ১ কোটি থেকে ১.৩ কোটি মানুষকে ২৫ বছরের মধ্যে বাপ্তিষ্ম প্রদান করেছেন কিন্তু এটি তাদের মূল লক্ষ্য নয় । যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে বহুল পরিমাণ মানুষকে ঈশ্বরের রাজ্যে নিয়ে আসার পরে তাদের অনুভূতিটি কেমন ছিল, তাঁদের নেতাদের মধ্যে একজন মন্তব্য করেন, “যারা পরিত্রাণ-প্রাপ্ত হয়েছে, তারা আমার লক্ষ্য নয় । আমি তাদের উপরে লক্ষ্য রাখি যাদের কাছে পৌঁছতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি – কোটি কোটি মানুষ এখনও অন্ধকারে আছে কারণ আমাদের যা করা উচিত ছিল আমরা তা এখনও করতে পারিনি” ।
এই আন্দোলনের একটি চিহ্ন হল একজন ব্যক্তি অথবা একটি দল ঈশ্বরের-আকারযুক্ত দর্শন গ্রহণ করে । যেন একটি অঞ্চলের বিভিন্ন দেশগুলি ঈশ্বরের রাজ্য দ্বারা পরিপূর্ণ হতে পারে । সমগ্র সুসমাচার অপ্রাপ্ত গোষ্ঠীর – ৮০ লক্ষ, অথবা ১ কোটি ৪০ লক্ষ অথবা ত্রিশ লক্ষ সংখ্যা যুক্ত – লোকদের সুসমাচারপ্রাপ্ত হতে দেখা – যার জন্য প্রত্যেকে যেন সুসমাচারের প্রতি নিজেদের প্রতিক্রিয়া দেবার সুযোগ পায় । তারা জিজ্ঞাসা করেঃ “আমরা কি করতে পারি ?” তা নয়, কিন্তু “কি ঘটতে পারে ?” যার ফলাফল অনুযায়ী তারা ঈশ্বরীয় পদ্ধতির উপযুক্ত এবং তাঁর শক্তিতে পরিপূর্ণ হয় । তারা স্বয়ং-বৃদ্ধিপ্রাপ্ত মণ্ডলী স্থাপনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যার ফলে নতুন শিষ্য তৈরি হয় এবং সমগ্র গোষ্ঠীর পরিবর্তন হয় ।
প্রতিটি অগম্য লোকদের মাঝে এবং স্থানে পৌঁছানো ২৪:১৪ আন্দোলনের প্রাথমিক লক্ষ্য নয় । এটি প্রত্যেক ব্যক্তি ও স্থানের কেবলমাত্র সূচনা (উদাহরণ, সেইস্থানের জনগোষ্ঠীগুলি)। আমরা কখনও সমস্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব না, যতক্ষণ না সমস্ত জনগোষ্ঠীর মধ্যে সেইকাজ শুরু হচ্ছে ।
মহান আদেশ পূর্ণ করার জন্য কি মুল্য প্রদান করতে হবে ?
প্রত্যেকটি মানুষ এবং স্থানে রাজ্যের আন্দোলনের সূচনা দেখতে হলে, আমরা কেবলমাত্র কৌশল এবং পদ্ধতি নির্ধারনের উপরে নির্ভরশীল হয়ে থাকতে পারি না । ঈশ্বর প্রারম্ভিক মণ্ডলীকে যে গতিশীলতা দিয়েছিলেন তা অনুসরণ করার জন্য আমাদের প্রস্তুত এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে । সেই সময়ে সেই অঞ্চলে এমন কোন স্থান বাকী ছিল না যেখানে যীশু খ্রীষ্টের সুসমাচার প্রচার করা হয়নি ।
সেই পরিস্থিতিতে ফেরার জন্য আমাদের মণ্ডলীগুলিকে কি মূল্য প্রদান করতে হবে ?
আর তাহারা প্রেরতিদের শিক্ষায় ও সহভাগিতায়, রুটি ভাঙ্গায় ও প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকিল । তখন সকলের ভয় উপস্থিত হইল, এবং প্রেরিতগণ কর্তৃক অনেক অদ্ভুত লক্ষণ ও চিহ্ন-কার্য্য সাধিত হইত । আর যাহারা বিশ্বাস করিল, তাহারা সকলে একসঙ্গে সমস্তই সাধারণে রাখিত; আর স্থাবর অস্থাবর সমস্ত বিক্রয় করিয়া, যাহার যেমন প্রয়োজন, তদনুসারে সকলকে অংশ করিয়া দিত । আর তাহারা প্রতিদিন একচিত্তে ধর্ম্মধামে নিবিষ্ট থাকিয়া এবং বাটীতে রুটি ভাঙ্গিয়া উল্লাসে ও হৃদয়ের সরলতায় খাদ্য গ্রহণ করিত; তাহারা ঈশ্বরের প্রশংসা করিত, এবং সমস্ত লোকের প্রীতির পাত্র হইল । আর যাহারা পরিত্রাণ পাইতেছিল, প্রভু দিন দিন তাহাদিগকে তাহাদের সহিত সংযুক্ত করিতেন (প্রেরিত ২:৪২-৪৭) ।
কর্তৃপক্ষের সম্মুখে পিতর এবং যোহনের মত প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করতে আমাদের কি মুল্য প্রদান করতে হবে ?
ঈশ্বরের কথা অপেক্ষা আপনাদের কথা শোনা ঈশ্বরের সাক্ষাতে বিহিত কিনা, আপনারা বিচার করুন; কারণ আমরা যাহা দেখিয়াছি ও শুনিয়াছি, তাহা না বলিয়া থাকিতে পারি না (প্রেরিত ৪:১৯-২০) ।
আমাদের কি করতে হবে যেন প্রভু সেই সাহসিকতা এবং মহান অলৌকিক কাজ ও চিহ্ন কার্য্য প্রদান করেন, যা সমগ্র প্রেরিত পুস্তকে লিপিবদ্ধ আছে ?
আর এখন হে প্রভু উহাদের ভয় প্রদর্শনের প্রতি দৃষ্টিপাত কর; এবং তোমার এই দাসদিগকে সম্পূর্ণ সাহসের সহিত তোমার বাক্য বলিবার ক্ষমতা দেও, আরোগ্য – দানার্থে তোমার হস্ত বিস্তার কর; আর তোমার পবিত্র দাস যীশুর নামে চিহ্ন – কার্য্য ও অদ্ভুত লক্ষণ সাধিত হয় । তাঁহারা প্রার্থনা করিলে, যে স্থানে তাঁহারা সমবেত হইয়াছিলেন, সেই স্থান কাঁপিয়া উঠিল; এবং তাঁহারা সকলেই পবিত্রআত্মায় পরিপূর্ণ হইলেন ও সাহস পূর্ব্বক ঈশ্বরের বাক্য বলিতে থাকিলেন (প্রেরিত ৪:২৯-৩১) ।
প্রেরিত ৭ অধ্যায়ে স্তিফানের মত আমরাও মৃত্যুবরণ করতে প্রস্তুত হবার জন্য আমাদের কি করতে হবে ?
সুসমাচার ছড়িয়ে পড়ার কারণে প্রেরিত ৮:১-৩ পদে লিপিবদ্ধ অত্যাচারের মতো মহান তাড়না সহ্য করার জন্য প্রস্তুত হতে আমাদের কি মুল্য প্রদান করতে হবে ?
আমাদের “শত্রুদের” কাছে সুসমাচার পৌঁছানোর জন্য আমাদের কি করতে হবে, যে ভাবে ফিলিপ শমরিয়াতে সুসমাচার প্রচার করেছিলেন যা প্রেরিত ৮:৫-৮ পদে লেখা আছে ?
আমাদের কি মূল্য প্রদান করতে হবে সেই সমস্ত লোকদের জন্য প্রার্থনা করতে এবং সুসমাচার প্রচার করে তাদের জীবন পরিবর্তন করতে যারা খ্রীষ্টানদের উপর এই সময় অত্যাচার করে চলেছে ? আমাদেরকে বিশ্বাস করতে হবে যে তারাও পৌলের মত মহান মিশনারীতে পরিবর্তিত হতে পারে ?
নিজেদের স্বার্থপরতা থেকে মুক্ত হতে আমাদের কি মুল্য প্রদান করতে হবে, যেন আমরা অন্যদেরকেও সমানভাবে গুরুত্ব দিতে পারি, এবং উপলব্ধি করতে পারি পিতর যেমন বলেছিলেনঃ
“আমি সত্যি বুঝিলাম, ঈশ্বর মুখাপেক্ষা করেন না; কিন্তু প্রত্যেক জাতির মধ্যে যে কেহ তাঁহাকে ভয় করে এবং ধর্ম্মাচরণ করে, সে তাঁহার গ্রাহ্য হয়” (প্রেরিত ১০:৩৪-৩৫) ।
পৌলের মত কাজ করতে ও ক্লেশ ভোগ করতে আমাদের কি মুল্য প্রদান করতে হবে, যেমন পৌল বলেছেনঃ
আমি অধিকতররূপে; আমি পরিশ্রমে অতিমাত্ররূপে, কারাবন্ধনে অতিমাত্ররূপে, প্রহারে অতিরিক্তরূপে, প্রাণসংশয়ে অনেক বার৷ যিহূদীদের হইতে পাঁচবার ঊনচল্লিশ আঘাত প্রাপ্ত হইয়াছি । তিন বার বেত্রাঘাত, এক বার প্রস্তরাঘাত, তিন বার নৌকাভঙ্গ সহ্য করিয়াছি, অগাধ জলে এক দিবারাত্র যাপন করিয়াছি; যাত্রায় অনেক বার, নদীসঙ্কটে, স্বজাতি-ঘটিত সঙ্কটে, পরজাতি-ঘটিত সঙ্কটে, নগরসঙ্কটে, মরুসঙ্কটে, সমুদ্রসঙ্কটে, ভাক্ত- ভ্রাতৃগণের মধ্যে ঘটিত সঙ্কটে, পরিশ্রমে ও আয়াসে, অনেক বার নিদ্রার অভাবে, ক্ষুধায় ও তৃষ্ণায়, অনেক বার অনাহারে, শীতে ও উলঙ্গতায় । আর সকল বিষয়ের কথা থাকুক, একটি বিষয় প্রতিদিন আমার উপরে চাপিয়া রহিয়াছে – সমস্ত মণ্ডলীর চিন্তা (২য় করিন্থীয় ১১:২৩খ-২৮) ।
নতুন নিয়মের সময়ে যেরূপ মণ্ডলী স্থাপিত হয়েছিল সেইরূপ মণ্ডলী স্থাপনের জন্য আমাদের কি মূল্য প্রদান করতে হবে ?
প্রত্যেক জাতির কাছে সাক্ষ্যরূপে সুসমাচার প্রচার করার জন্য আমাদের কি মুল্য প্রদান করতে হবে (মথি ২৪:১৪) ?