Categories
আন্দোলন সম্পর্কে

আন্দোলনে মাইন্ডশিফট – পর্ব ১

আন্দোলনে মাইন্ডশিফট – পর্ব ১

– এলিজাবেথ লরেন্স এবং স্ট্যান পার্কস দ্বারা লিখিত –

আমাদের এই সময়ে ঈশ্বর মণ্ডলী স্থাপণের আন্দোলনের (সি.পি.এম.-এর) দ্বারা বিশ্ব জুড়ে মহান কার্যগুলি করছেন ৷ সি.পি.এম.-এর মানে এই নয় যে প্রথাগত মণ্ডলীস্থাপণ ফলদায়ক হচ্ছে ৷ একটি বৈশিষ্ট্যসূচক পরিচর্য্যা পদ্ধতির ঈশ্বর প্রদত্ত ফলকে সি.পি.এম. বর্ণনা করেছে – অদ্বিতীয় সি.পি.এম.-জাত “ডি.এন.এ.৷” সি.পি.এম.-এর দৃষ্টিকোণ ও নির্দেশনগুলি মণ্ডলীর জীবন ও পরিচর্য্যার নির্দেশনগুলি থেকে অনেক দিক থেকেই ভিন্ন, যা আমাদের অনেককেই “স্বাভাবিক” বলে মনে হতে পারে ৷  

দ্রষ্টব্য, আমাদের সাথে সি.পি.এম.-গুলিতে জড়িত অনেকের জন্য ঈশ্বররের দ্বারা কৃত পরিবর্তন দেখেছি, আমরা সেই দৃষ্টান্তগুলিকে সনাক্ত করতে চাই ৷ কিন্তু এইগুলিকে পরীক্ষণ করার পূর্বে, আমরা স্পষ্ট করেত চাইঃ আমরা বিশ্বাস করি না যে সি.পি.এম.-ই পরিচর্য্যা করার একমাত্র পথ বা যদি কেউ সি.পি.এম. করছে না, তাহলে তাদের দৃষ্টান্ত ভ্রান্ত ৷ যারা আমাদের পূর্বে গিয়েছিলেন আমরা তাঁদের ভীষণভাবে শ্রদ্ধা জানাই; আমরা তাঁদেরই কাঁধের উপর দাঁড়িয়ে আছি ৷ আমরা খ্রীষ্ট দেহের অন্যদেরও সম্মান করি যারা অন্যান্য ধরনের পরিচর্য্যাগুলির মধ্যে বিশ্বাসযোগ্য ও ত্যাগের সাথে সেবা করে ৷

এই প্রসঙ্গে, আমরা প্রধাণত পশ্চিমদেশীয় লোকদের জন্য দৃষ্টান্তের পার্থক্যগুলি পরীক্ষা করবো যারা সি.পি.এম.-এর অনুঘটন সংক্রান্ত বিষয়ে সাহায্য করতে চান ৷ যারা আমাদের মধ্যে জুড়তে চায় তাদের ধ্যান রাখতে হবে যে একটি আন্দোলনের পরিবেশ তৈরী করার জন্য আমাদের নিজেদের মানিসিকতায় কি পরিবর্তন হতে হবে ৷ মানসিক পরিবর্তন আমাদের বিষয়গুলিকে ভিন্নভাবে ও সৃজনশীল ভাবে দেখতে সাহায্য করে ৷ এই দৃষ্টিকোণের পরিবর্তন ভিন্ন আচরণ ও ফলাফলের দিকে অগ্রসর করে ৷ প্রভূ’র মহান কার্যের কিছু উপায় যা সি.পি.এম.-গুলিতে আমাদের চিন্তাধারাকে নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের আহ্বান করে ৷ 

শুরুঃ “এটি সম্ভব; আমি আমার দর্শনকে সম্পূর্ণ করার একটি পথ দেখতে পাচ্ছি ৷”

শেষঃ ঈশ্বরের-আকারবিশিষ্ট একটি দর্শন, তাঁর মধ্যবর্ত্তিতা ছাড়া অসম্ভব ৷ ঈশ্বরের নির্দেশ ও শক্তির জন্য তাঁর অপেক্ষারত ৷ 

আধুনিক কালে এত সংখ্যক সি.পি.এম.-গুলি শুরু হয়েছে বলে মনে হওয়ার একটি মূল কারণ হলো সমগ্র জাতির লোকের কাছে পৌঁছানোর প্রতি ধ্যান কেন্দ্রীভূত করে লোকেরা ঈশ্বরের-আকারবিশিষ্ট দর্শনকে গ্রহণ করেছে ৷ যখন লক্ষ লক্ষ মানুষের সমন্বিত সুসমাচার অপ্রাপ্ত গোষ্ঠীর মধ্যে পৌঁছানোর কার্যের সম্মুখীন হওয়া হয়, তখন এটি স্বাভাবিক যে একজন কর্মী কখনই তাদের নিজের কোনকিছু সম্পন্ন করতে পারে না ৷ সত্যটি হচ্ছে “আমা ভিন্ন তোমরা কিছুই করতে পার না” যা আমাদের সকলের প্রচেষ্টায় প্রযোজ্য ৷ যাইহোক, যদি আমাদের লক্ষ্য ছোট হয় তবে কাজ করা সহজ হয় যেমন ঈশ্বরের মধ্যবর্ত্তিতার পরিবর্তের ফল আমাদের প্রচেষ্টার উপর নির্ভর করে ৷

শুরুঃ প্রত্যেককে শিষ্য করার লক্ষ্য ৷

শেষঃ একটি রাষ্ট্রকে শিষ্য করার লক্ষ্য ৷

মহান আদেশে যীশু খ্রীষ্ট তার শিষ্যদের “পান্তা তা এথনে –কে শিষ্য কর” (সব এথনে/ প্রত্যেক এথনোস্) ৷ প্রশ্ন হলোঃ “আপনি সমগ্র এথনোস্ –কে কিভাবে শিষ্য করবেন?” একমাত্র উপায় হলো সংখ্যাবৃদ্ধির দ্বারা – শিষ্য যারা শিষ্য তৈরী করে, মণ্ডলী যারা মণ্ডলীর সংখ্যাবৃদ্ধি করে, এবং নেতারা যারা নেতাদের বিকাশ করে ৷

শুরুঃ “এটি এখান হতে পারে না !”

শেষঃ পরিপক্ক ফসলের প্রত্যাশা করা ৷

বিগত ২৫ বছর ধরে লোকেরা বলেছেঃ “আন্দোলনগুলি সেই দেশগুলিতে শুরু হতে পারে, কিন্তু এখানে নয় !” আজ লোকেরা উত্তর ভারতের অনেক আন্দোলনগুলিকে চিহ্নিত করে কিন্তু ভুলে যায় যে এই অঞ্চলটি ২০০ বছরেরও বেশী সময় ধরে “আধুনিক মণ্ডলীগুলির কবরস্থান”৷ কেউ কেউ বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যে আন্দোলনগুলি ঘটতে পারে না কারণ তা ইসলামের অন্তঃস্থল !” তথাপি অনেক আন্দোলনগুলি এখন মধ্যপ্রাচ্যে ও মুসনলাম জগতে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে ৷ অন্যরা বলেন, “এটি ইউরোপ ও আমেরিকা ও অন্যান্য স্থানের প্রথাগত মণ্ডলীর সাথে ঘটতে পারে না !” তথাপি আমরা এখন ওই সমস্ত স্থানগুলিতে নানান ধরনের আন্দোলনগুলি শুরু হতে দেখতে পাই ৷ ঈশ্বর আমাদের সন্দেহগুলির ওপর জয়লাভ করতে ভালবাসেন ৷

শুরুঃ “আমি কি করতে পারি?”

শেষঃ “এই সমস্ত গোষ্ঠীর (শহর, দেশ, ভাষা, উপজাতি, ইত্যাদি ৷) লোকেদের মধ্যে ঈশ্বরের রাজ্য স্থাপণের জন্য কি করা আবশ্যক ?”

একবার একটি প্রশিক্ষণ গোষ্ঠী প্রেরিত ১৯:১০ পদ নিয়ে আলোচনা করছিল – দুই বছরের মধ্যে এশিয়ার রোমীয় প্রদেশের প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ ব্যক্তিরা প্রভুর বাক্য শুনেছিল ৷ কেউ একজন বলেছিলেন, “ওটা পৌল ও ইফিষীয়ের প্রকৃত ১২ জন বিশ্বাসীর পক্ষে অসম্ভব ছিল – তাদের একদিনে ২০,০০০ ব্যক্তিদের বাক্য শোনাতে হতো ৷” এটাই লক্ষ্যনীয় বিষয় যে – তাদের কাছে সেটি সম্পন্ন করার কোন উপায় ছিলা না ৷ তাইরেনস্ প্রেক্ষাগৃহে প্রত্যাহিক প্রশিক্ষণ শিষ্যদের সংখ্যাবৃদ্ধি করেছিল যারা শিষ্যদের সংখ্যাবৃদ্ধি করেছিল সমগ্র অঞ্চলের শিষ্যদের সংখ্যাবৃদ্ধি করেছিল ৷

শুরুঃ “আমার গোষ্ঠী কি সম্পাদন করতে পারে ?”

শেষঃ “এই অসম্ভব মহান কার্যটি সম্পাদন করতে আর কে অংশীদার হতে পারে ?

এটি উপরোক্ত মানসিক পরিবর্তনের সমান ৷ আমরা বুঝতে পেরেছি, আমাদের নিজেদের মণ্ডলী, সংস্থা, বা খ্রীষ্টীয় গোষ্ঠীগুলির ব্যক্তি ও সম্পদের উপর ধ্যান কেন্দ্রীভূত করার বজায়, আমাদেরকে সব ধরনের মহান আদেশগত সংস্থাগুলি ও মণ্ডলী গুলির সাথে সমগ্র বিশ্বব্যাপী খ্রীষ্টীয় দেহের প্রতি নজর দেওয়া উচিত ৷ আমাদের প্রয়োজনীয় অনেক প্রচেষ্টার জন্য বিবিধ বরদানপ্রাপ্ত ও পেশাগত ব্যক্তিদেরও জড়িত করতে হবেঃ প্রার্থনা, সংগঠন, আর্থিক, ব্যবসা, অনুবাদ, ত্রান, উন্নয়ন, চিত্রকলা, ইত্যাদি ৷

শুরুঃ আমি প্রার্থনা করি ৷

শেষঃ আমরা অসাধারণভাবে প্রার্থনা করি এবং অন্যদের সচল রাখতে প্রার্থনা করি ৷

সমস্তকিছুর পুনরুৎপাদন আমাদের লক্ষ্য ৷ ব্যক্তিগত প্রার্থনা নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু যখন সমগ্র সম্প্রদায়, শহর এবং গোষ্ঠীর লোকেদের কাছে পৌঁছানোর কার্যের অপরিসীম বোঝাপড়ার সম্মুখীন হতে হয় – আমাদের অন্যান্য অনেকের প্রার্থনাকে সচল রাখতে হয় ৷

শুরুঃ আমার পরিচর্য্যা আমার সফলতার দ্বারা পরিমাপ করা হয় ৷

শেষঃ আমরা কি সংখ্যাবৃদ্ধির (যা আমাদের পরিচর্য্যার সময় ঘটতেও পারে বা নাও পারে) মঞ্চ তৈরীর কাজটি বিশ্বস্ততার সাথে করছি ?

বৃদ্ধি ঈশ্বরের দায়িত্ব (১ করিন্থীয় ৩:৬-৭)৷ কখনো কখনো প্রথম সংখ্যাগরিষ্ঠ মণ্ডলীগুলির অনুঘটনের প্রচেষ্টায় বেশ কয়েক বছর লেগে যায় ৷ ক্ষেত্রের কর্মীদের বলা হয়েছিল, “কেবল ঈশ্বরই সাফল্য দান করতে পারেন ৷ যখন আপনি ঈশ্বরের কার্যের জন্য অপেক্ষারত আপনার কাজ হলো বিশ্বাসযোগ্য ও বাধ্য হয়ে থাকা ৷” নতুন নিয়মে প্রাপ্ত শিষ্য-তৈরীর সংখ্যাবৃদ্ধির পদ্ধতি অনুসরণ করে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ শ্রম দান করি এবং আমরা পবিত্র আত্মাকে বৃদ্ধি আনয়নের জন্য বিশ্বাস করি ৷ 

শুরুঃ বহিরাগত মিশনারী হলেন “পৌল”, সুসমাচার অপ্রাপ্তদের মধ্যে অগ্রগণ্য হয়ে প্রচার করছেন ৷

শেষঃ “বার্নবা”র মতো বহিরাগতরা অনেক বেশী সক্রিয় হয়, সংস্কৃতির আবিষ্কার, উৎসাহপ্রদান ও শক্তিশালী করে  তোলার ক্ষেত্রে “পৌল৷”

প্রেরিত পৌলের পর আদর্শরূপে, মিশনারী হিসাবে পাঠানো লোকেদের অনেক সময় নিজেদের অগ্রগণ্য কর্মী হিসাবে গন্য করতে উৎসাহিত করা হতো ৷ এখন আমরা বুঝতে পেরেছি যে দূরের বহিরাগতদের পরিবর্তে সাংস্কৃতিক অভ্যন্তরস্থ বা নিকটবর্তী প্রতিবেশীদের খুঁজে ও তাদের অংশীদার করে যারা নিজেদের সমাজের জন্য “পৌল” হয়ে উঠেছে তাদের দ্বারা বিরাট প্রভাব ফেলা যেতে পারে ৷

দ্রষ্টব্য, প্রথম বার্ণবাও একজন নেতা ছিলেন যিনি “কার্য করেছিলেন” (প্রেরিত ১১:২২-২৬; ১৩:১-৭)৷ তাহনে আন্দোলনের অনুঘটনের জন্য প্রথমত তাদের নিজেদের সংস্কৃতির মধ্যে শিষ্য তৈরীর অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে এবং তারপর কেন্দ্রীভূত সংস্কৃতি থেকে যাদের তারা উৎসাহিত ও শক্তিশালী করতে পারবে সেই “পৌলগুলিকে” খুঁজে বের করার জন্য মিশ্র-সাংস্কৃতিকভাবে কাজ করতে হবে ৷

দ্বিতীয়ত, এমনকি এই সমস্ত “পৌলদের” তাঁদের দৃষ্টান্তগুলিকে মানিয়ে নিতে হবে ৷ ভারতের এক বৃহৎ আন্দোলনের বহিরাগত অনুঘটকগুলি তাঁদের ভূমিকা ভালোভাবে বোঝার জন্য বার্নবা’র জীবনী পড়েছিল ৷ তারপর তাঁরা এই আন্দোলনের প্রারম্ভিক “পৌলদের” অংশগুলি পড়েছিলেন ৷ সেই নেতারা পরিবর্তে বোঝতে পেরেছিল যে তাঁদের সাংস্কৃতিক ধারার বিপরীতে (যে প্রারম্ভিক নেতা সবসময় সেরা হয়), প্রতিদানে তাঁরা বার্ণবার মতো হতে  এবং তাঁদের শিষ্যদের শক্তিশালী করে চেয়েছেন, আরও বিরাট প্রভাবের জন্য ৷ 

শুরুঃ একজন নতুন বিশ্বাসী বা নতুন বিশ্বাসীদের দল একটি আন্দোলন আরম্ভ করবে আশা করা ৷

শেষঃ জিজ্ঞেস করাঃ “জাতীয় বিশ্বাসীরা যারা অনেক বছরের অনুসরণকারী তারা কি সি.পি.এম.-এর অনুঘটক(গুলি) হতে পারবে ?”

এটি সাধারণ ধারণার সাথে সম্পর্কযুক্ত যে আমরা এক সাংস্কৃতিক দূরবর্তী বহির্গত কোনো হারানো ব্যক্তিকে(দের) খুঁজতে ও জয় করতে পারবো, যে আন্দোলনের এক অনুঘটক হয়ে উঠবে ৷ এটি যখন আকস্মিকভাবে ঘটে, প্রচুর সংখ্যক আন্দোলনগুলি সাংস্কৃতিক অভ্যন্তরস্থ বা নিকটবর্তী প্রতিবেশীদের দ্বারা শুরু হয়, যারা বেশ কিছু বা বহু বছর থেকে বিশ্বাসী ৷ তাঁদের নিজেদের মানসিক পরিবর্তনগুলি এবং সি.পি.এম.-এর নীতিগুলির সম্যক উপলব্ধি রাজ্য বিস্তারের নতুন সম্ভাবনাগুলির দ্বার খুলে দেয় ৷

২য় ভাগে, আমরা প্রভূ’র মহান কার্যের কিছু অতিরিক্ত উপায় বলবো যা সি.পি.এম.-গুলিতে আমাদের চিন্তাধারার নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদের আহ্বান করে ৷ 

 

 

এলিজাবেথ লরেন্সের ২৫ বছরের বেশী মিশ্র-সাংস্কৃতিক পরিচর্য্যার অভিজ্ঞতা ছিল ৷ এর মধ্যে ছিল প্রশিক্ষণ, প্রেরণ, ও সি.পি.এম. দলগুলিকে সুসমাচার অপ্রাপ্ততে, এক ইউ.পি.জি. থেকে যাযাবরের মধ্যে জীবনযাপনে এবং এক বিএএম উপক্রমকে মুসলমান প্রসঙ্গে পরিচালনায় প্রশিক্ষা ৷ তিনি শিষ্যদের সংখ্যাবৃদ্ধির বিষয়ে বিশেষ উৎসাহী ছিলেন ৷

 

মিশন ফ্রন্টিয়ার্স-এর  মে-জুন মাসের  ২০১৯ সালের প্রকাশনায়, একটি প্রবন্ধ থেকে সংকলিত, http://www.missionfrontiers.org

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।